মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্ব:
রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কে মার্কস কোন একটি নির্দিষ্ট গ্রন্থে তার রাষ্ট্রচিন্তা ব্যক্ত করেননি। এঙ্গেলস এর সঙ্গে একত্রে লিখিত Communist Manifesto ছাড়াও The German Ideology, The Class Struggle in Frany, Critique of Hegel's Doctrine of the State, Das Kapital প্রভৃতি রচনায় রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসের চিন্তাধারা প্রকাশিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে লেলিন উত্তর মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বে মৌলিক চিন্তাভাবনার সংযোজন করেন আনতে নিও গ্রামসি, আলথুসার, পৌলানতজাস প্রমুখ। মার্কসীয় রাষ্ট্রচিন্তার মূল দিকগুলি হল-
1. সমাজ বিবর্তনের বিশেষ স্তরে রাষ্ট্রের উদ্ভব:
মার্কসীয় মতবাদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রের আবির্ভাব আকস্মিকভাবে ঘটেনি। উৎপাদন ব্যবস্থার প্রকৃতিগত পরিবর্তনের ফলে সমাজ বিবর্তনের একটি বিশেষ স্তরে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। আদিম সাম্যবাদী সমাজে রাষ্ট্র ছিল না। সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের পর রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়। ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের মতে, অনাদিকাল থেকেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল এমনটা নয়। রাষ্ট্র ছাড়াই অনেক সমাজ ছিল, যেখানে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কোনো ধারণা ছিল না। অর্থনৈতিক বিকাশের একটি বিশেষ স্তরে সমাজে যখন অনিবার্যভাবে শ্রেণীবিভাগের উদ্ভব ঘটে তখন রাষ্ট্রের প্রয়োজন দেখা দেয়।
2. রাষ্ট্র সম্পত্তির মালিকানার নিরাপত্তার হাতিয়ার:
ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের ফলে সমাজ পরস্পর বিরোধী দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে সম্পত্তিবান শোষক শ্রেণি, অন্যদিকে সম্পত্তিহীন শোষিত শ্রেণী। এই নতুন অবস্থায় সম্পত্তির মালিকানার নিরাপত্তার জন্য যে বল প্রয়োগমূলক হাতিয়ারের প্রয়োজন হয় তা হলো রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্র নামক হাতিয়ারের সাহায্যে সামাজে প্রভুত্বকারি সংখ্যালঘু শ্রেণী সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্পত্তিহীন শ্রেণীকে শোষণ করে। এভাবে প্রতিটি শ্রেণী বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থাতেই উৎপাদনের উপাদানের মালিকদের স্বার্থে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করা হয়। রাষ্ট্র এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিকে শোষণ করার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। লেনিনের ভাষায় বলা যায়, রাষ্ট্র হলো শ্রেণী শোষণের একটি হাতিয়ার, রাষ্ট্র হল এক শ্রেণী কর্তৃক অন্য শ্রেণীকে অবদমিত করে রাখার যন্ত্র বিশেষ।
0 মন্তব্যসমূহ