বিশ্বায়নের সংজ্ঞা:
বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দাও। অথবা, বিশ্বায়ন কাকে বলে? |
বর্তমান বিশ্বের এক বহু আলোচিত শব্দ হলো গ্লোবালাইজেশন, যার বাংলা প্রতিশব্দ বিশ্বায়ন বা ভুবনায়ন। সাম্প্রতিক কালের বহু ব্যবহৃত ও পরিচিত শব্দ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বায়নের কোন সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। সহজ কথায় বিশ্বায়ন সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের বিস্তারের কথা বলে। অর্থনীতির প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্বায়নের মূল কথা হলো মুক্ত বা খোলা বাজার অর্থনীতি। বিশ্বায়ন চায় সমগ্র বিশ্বকে একটি বাজারে পরিণত করতে, যেখানে দেশের বাজার আর বিশ্বের বাজারের মধ্যে কোন বাধার প্রাচীর থাকে না। কোন দেশ যে জিনিস ভালো উৎপাদন করবে, সে তার বিদেশে রপ্তানি করবে এবং বিদেশী মুদ্রা রোজগার করবে। উল্টো দিকে, যা সে উৎপাদন করতে পারবে না, এই জিনিসগুলো সে বিদেশ থেকে আমদানি করবে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র পরস্পর পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। পণ্য, পরিষেবা, প্রযুক্তি, তথ্য ইত্যাদি বিষয়গুলি বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের মধ্যেই অবাধে আদান-প্রদান করা যাবে। বস্তুত যখন দেশে বাণিজ্যিক লেনদেন ও আদান-প্রদানের উপর কৃত্রিম কোন বাধা-নিষেধ থাকে না, যখন বিভিন্ন দেশের মধ্যে মূলধন, শ্রম ইত্যাদির গমনা গমন বাজারি শক্তির স্বাধীন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার দ্বারা নির্ধারিত হয়, তখনই বিশ্বায়ন ঘটে। বিশ্বায়ন হলো বিশ্বজুড়ে প্রসারিত একটি প্রক্রিয়া, যার দ্বারা রাষ্ট্র সংক্রান্ত সমস্ত সংকীর্ণ ধারণার অবসান ঘটে এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অবাধ আদান-প্রদানের পথ সহজ হয়। জোসেফ স্টিগলিৎস এর মতে, বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠ সংহতি সাধন যা পরিবহন ও যোগাযোগের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস করেছে এবং দ্রব্য সামগ্রী, পরিষেবা, পু্জি, জ্ঞান এমনকি পৃথিবীজুড়ে মানুষের অবাধ যাতায়াতের অধিকারের উপর আরোপিত কৃত্রিম বাধা নিষেধকেও অতিক্রম করেছে।
0 মন্তব্যসমূহ